দেবাশীষ সাহা রায়, বিশেষ প্রতিনিধি
শেরপুরের নকলা উপজেলায় সরকারি কৃষি প্রণোদনার ভাগ না পাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে কর্তব্যরত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদীর ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ও জড়িত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় জড়িত নকলা উপজেলা ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সদস্যসচিব রাহাত হাসান কাইয়ুম ও তাঁর সহযোগী ফজলুকে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে বৃহস্পতিবার দুপুরে নকলা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের সামনে এবং বিকেলে শেরপুর জেলা শহরের চকপাঠক এলাকায় খামারবাড়ির সামনে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে নকলা উপজেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, বিসিএস কৃষি এ্যাসোসিয়েশন ও ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাহাত হাসান কাইয়ুম ও তাঁর সহযোগী ফজলুকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানসহ ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা।
মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. সালমা লাইজু, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, শেরপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসলিমা বেগম নিলু ও ভুক্তভোগী নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী বক্তব্য দেন।
মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এই হামলা শুধু একজন কৃষি কর্মকর্তার লাঞ্ছনা নয়, বরং দেশের কৃষিখাতকে অবরোধ ও ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রের অংশ। তাঁরা হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেন। অন্যথায় কর্মবিরতি এবং বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি জানানো হয়।
মানববন্ধনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, শেরপুরের উপপরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকারি দপ্তরে অনুপ্রবেশ করে হামলা ও মারধর অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দোষীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা যাতে নিরাপদের সঙ্গে সরকারের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারেন তার জন্য আইন-শৃঙ্খরা রক্ষাবাহিনী কর্তৃক প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কর্মসূচিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপপরিচালক সালমা আক্তার, তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের সিনিয়র মনিটরিং অফিসার খাইরুল আমিন শোয়েব, পার্টনার প্রকল্পের সিনিয়র মনিটরিং অফিসার ড. সালাহউদ্দিন কায়সার, অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মো. আলমগীর কবীরসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, কৃষি কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার দুপুরে সরকারি কৃষি প্রণোদনার ভাগ না দেওয়ায় নকলা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদীর অফিসকক্ষে প্রবেশ করে তাঁকে মারধর করেন উপজেলা ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সদস্যসচিব রাহাত হাসান কাইয়ুম ও ছাত্রদল কর্মী ফজলু। ওই ঘটনায় কাইয়ুম ও ফজলুর বিরুদ্ধে নকলা থানায় মামলা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাকে মারধরের সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব রাহাত হাসান কাইয়ুমকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।







