
শেরপুরে শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। গত ১৪ অক্টোবর শনিবার মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ। আক্ষরিক অর্থে এদিনই দুর্গাপূজার সূচনা হয়। তাই বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্বজনীন এ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে এখন মন্দির-মণ্ডপগুলোয় চলছে সার্বক্ষণিক ব্যস্ততা। দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বরণ করতে সর্বত্র সাজ সাজ রব। প্রতিমা নির্মাণে প্রতিমাশিল্পীদের চোখে ঘুম নেই। দিনেও অবসর নেওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিমাশিল্পীদের এখন রাতদিন একাকার।
পাশাপাশি পূজামণ্ডপ, তোরণ নির্মাণ ও আলোকসজ্জা নিয়ে ব্যস্ত কারিগরেরা। এভাবেই সদর উপজেলার ৭২, নালিতাবাড়ীর ৩৬, নকলার ১৯, ঝিনাইগাতীর ১৮ ও শ্রীবরদী উপজেলার ১২টিসহ জেলার ১৫৭টি পূজামন্ডপে এখন চলছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতিমূলক নানা আয়োজন। করোনার প্রকোপ না থাকায় তিন বছর পর আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গোৎসব উদ্যাপন করবেন।
আগামী ২০ অক্টোবর ষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব।
বুধবার দুপুরে শেরপুর শহরের কয়েকটি পূজামণ্ডপে দেখা যায়, দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যেই অধিকাংশ মণ্ডপে দুর্গা প্রতিমাসহ অন্যান্য প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন প্রতিমাশিল্পীরা। পাশাপাশি কয়েকটি মণ্ডপে পোশাক পরিচ্ছদ পরিধানসহ প্রতিমা রং করার কাজও চলছে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার আবেগ নিয়ে মশার কামড় উপেক্ষা করে রাত-দিন কাজ করে চলেছেন প্রতিমাশিল্পীরা।
এ সময় শহরের নয়আনী বাজার এলাকায় অবস্থিত ৬১ বছরের প্রাচীন পোদ্দার বাড়ির পূজামণ্ডপে কথা হয় সদর উপজেলার বয়ড়া পালপাড়া গ্রামের প্রতিমাশিল্পী দিলীপ কুমার পালের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তিনি ও তাঁর কয়েক সহযোগী মিলে ২০টি মণ্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই সবকটি প্রতিমার মাটির কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন প্রতিমার গায়ে পোশাক পরিধান ও রং দেওয়ার কাজ চলছে। দেবীর বোধনের আগেই এসব প্রতিমার কাজ শেষ করে মণ্ডপ কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, দ্রুত প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করতে তাঁরা এখন নির্ঘুম কাজ করছেন।
বয়ড়া পালপাড়া গ্রামের আরেক প্রতিমাশিল্পী রাজ কুমার পাল বলেন, তিনি ও তাঁর সহযোগীরা ১৫টি পূজামণ্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। এজন্য প্রতিমা ভেদে ৩০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পাবেন। কিন্তু বর্তমান বাজারে এ পারিশ্রমিক খুবই অপ্রতুল। কারণ অন্য বছরের তুলনায় চুল, রঙসহ প্রতিমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণের মূল্য এবার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। তাই প্রতিমা তৈরি করে সংসার চালানো এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। পরিশ্রম অনুযায়ী তিনি তাঁদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর জন্য মণ্ডপ কর্তৃপক্ষের নিকট আহবান জানান।
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুব্রত কুমার দে বলেন, প্রতিমাশিল্পীদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর জন্য তাঁর সংগঠনের পক্ষ থেকে মণ্ডপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।