
নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্র-জনতার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেরপুরে আন্দোলনকারী ৩ কলেজ ছাত্র হত্যার পৃথক মামলায় ১১ মাস পর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। ওইসব মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সাবেক ৪ হুইপ-এমপি, জেলা চেয়ারম্যান, ৬ উপজেলা চেয়ারম্যান, ৪ মেয়র ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও তার গাড়ী চালক মিলে মোট আসামি হয়েছেন ৫০৫ জন। আর তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা না পাওয়ায় অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়েছে পুলিশের ডিআইজি ও শেরপুরের সাবেক এসপি আনিসুর রহমান, সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা সাব্বির আহমেদ খোকন, শহর আওয়ামী লীগ নেতা জুলফিকার আলী ও সাংবাদিক মেরাজ উদ্দিনসহ ৩৩ জনের। অন্যদিকে চার্জশিটে থাকা আসামিদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন কুমার পালসহ কয়েকজন কারাগারে থাকলেও মূল আসামিদের প্রায় সবাই এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। ৯ জুলাই বুধবার দুপুরে ওই ৩ চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. জিয়াউর রহমান জানান, ওইসব মামলায় আদালতে চার্জশিট গৃহিত হলেই পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন এক পর্যায়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী এক দফায় রূপ নিলে ছাত্র-জনতার মিছিল চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট শেরপুর শহরের খরমপুর এলাকায় আন্দোলনবিরোধী আওয়ামী লীগের একাংশের পাল্টা মিছিল থেকে গুলিতে নিহত হন কলেজ শিক্ষার্থী সবুজ মিয়া (১৮)। একই সময়ে প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বহনকারী একটি দ্রুতগতির গাড়ির চাপায় নিহত হন মাহবুব আলম ও শারদুল আশীষ সৌরভ। এছাড়া আহত হন আরও কয়েকজন। এরপর ১২ আগস্ট সবুজ মিয়া হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই সাদ্দাম হোসেন (২৮) বাদী হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন সংসদ সদস্য ছানুয়ার হোসেন ছানু ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমানসহ ২৫ জনকে স্বনামে এবং অজ্ঞাতনামা ৩০০/৪০০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ২১ আগস্ট ওই মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক হুইপ-এমপি আতিউর রহমান আতিকসহ মোট ১৯৩ জনকে আসামি করে একটি সংশোধিত অভিযোগ দায়ের হয়। দীর্ঘ ১১ মাসের তদন্ত শেষে গত ৩ জুলাই ওই মামলায় সাক্ষ্যপত্র অনুমোদন ও ৭ জুলাই আদালতে মোট ২০৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছাড়াও আরও উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ফাতেমাতুজ্জহুরা শ্যামলী, সাবেক মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন , মো: আবু বকর বাক্কার (নালিতাবড়ী), হাফিজুর রহমান লিটন (নকলা) ও মোহম্মদ আলী লাল (শ্রীবরদী), সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাঈম (ঝিনাইগাতি), মাহবুব আলম সোহাগ (নকলা), জুয়েল আকন্দ (শ্রীবরদী), হাজী মো: মোশারফ হোসেন ও মোকসেদুর রহমান লেবু (নালিতাবাড়ী) ।
এছাড়া এ মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি আরও আসামী হয়েছেন জেলা জাসদের সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন। এ মামলায় সত্যতা না পাওয়ায় ১৭ জনকে অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়েছে।
এছাড়া মাহবুব হত্যার ঘটনায় তার মা মোছা. মাফুজা খাতুন (৫৪) বাদী হয়ে গত বছরের ১২ আগস্ট অজ্ঞাতনামা ৩০০/৪০০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ১৯ আগষ্ট ওই মামলায় একইভাবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ৮১ জনকে স্বনামে ও অজ্ঞাতনামা ৩০০/৪০০ জনকে আসামি করা হয়। একইভাবে এই মামলায় তদন্ত শেষে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম শাকিল ও গাড়িচালক হারুন মিয়াসহ ১৫০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ মামলায় ৭ জনকে অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়েছে।
তাছাড়া শারদুল আশীষ সৌরভ হত্যার ঘটনায় গত ২৭ আগস্ট তার বাবা সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসনের গাড়িচালক হারুন মিয়াসহ ৮৭ জনকে স্বনামে ও অজ্ঞাতনামা ৩০০/৪০০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলাতেও রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি ছাড়াও জেলা প্রশাসনের তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম শাকিল ও গাড়িচালক হারুন মিয়াসহ ১৫০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ মামলায় ৯ জনকে অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়েছে।
এব্যাপারে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেরপুর সদর থানায় করা ৩টি হত্যা মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। আদালতের পরোয়ানা জারি হলে পলাতকদের গ্রেফতারে অভিযান চলবে।