
বিশেষ প্রতিনিধি:
শেরপুরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের মালামালসহ ছিনতাই হওয়া ট্রাকের মালিক ও ব্যবসায়ী মো. মোফাজ্জল হোসেন ওরফে মিন্টুকে কথিত ফ্যাসিস্ট ট্রাক শ্রমিক নেতা কর্তৃক হত্যার হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের খরমপুর এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন। মোফাজ্জল প্রয়াত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহজামাল মিয়ার ছেলে ও খরমপুর (নতুন বাজার) এলাকার মেসার্স মিন্টু সন্সের স্বত্বাধিকারী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি প্রায় ৪০ বছর যাবত অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছি। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন কামাল ভেজিটেবল ওয়েল মিল থেকে আমার নিজস্ব ট্রাকে (নম্বর: ঢাকা মেট্রো-ট-২০-৪৯৫১) ৭৫ ড্রাম ভোজ্য তেল নিয়ে শেরপুরে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সেসময় ট্রাকটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন চালক আব্দুস সামাদ। মালামালসহ ট্রাকটির আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪৮ লাখ টাকা ।’
তিনি বলেন, পথিমধ্যে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার বৈলর এসে ট্রাকটি ছিনতাই হয় বলে দায়িত্বরত ট্রাকচালক শেরপুরের অন্য এক ব্যবসায়ীকে জানান। পরবর্তীতে তিনি (মোফাজ্জল) তাঁর অন্য স্টাফদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন।
এ ঘটনায় ট্রাকচালক আব্দুস সামাদ, চালক সহকারী ইউনুস আলী এবং অপর এক চালক বাবুল মিয়াকে আসামি করে ময়মনসিংহের ভালুকা মডেল থানায় এজাহার দাখিল করা হয়। এরপর পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ট্রাকচালক আব্দুস সামাদ ও চালক সহকারী ইউনুস আলীকে গ্রেপ্তার করে। সেইসঙ্গে মানিকগঞ্জ জেলার আরিচা ফেরিঘাট এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ট্রাকটি উদ্ধার করে। তবে উদ্ধারকৃত ট্রাক থেকে কোন তেলের ড্রাম পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে তেল উদ্ধারের জন্য ব্যবসায়ী মোফাজ্জল পুনরায় ভালুকা থানা ও ডিবি পুলিশের শরণাপন্ন হন। তবে এখন পর্যন্ত ছিনতাই হওয়া ট্রাকের কোন মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
লিখিত বক্তব্যে ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘মামলা দায়েরের পর শেরপুর জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের কথিত ফ্যাসিস্ট দোসর কয়েকজন নেতা আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে হত্যার হুমকি এবং চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। আমি এতে রাজি না হওয়ায় সম্প্রতি তাঁরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছেন। এছাড়া আজ বৃহস্পতিবার সকালে আমার ক্রয়কৃত একটি ট্রাক (নম্বর: ঢাকা মেট্রো ট-২০-৫০১২) শেরপুর শহরের গৌরীপুর বাসসট্যান্ড এলাকায় মেরামত কাজে নিয়ে গেলে কতিপয় শ্রমিক নেতা বাধা এবং ট্রাকটি আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।’
ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন আরও বলেন, ‘এসব হুমকির বিষয়ে আমি শেরপুর সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। আমি এবং আমার পরিবার বর্তমানে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি ৪৮ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধারে সাংবাদিক ও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’
জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক হোসেন সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে করা ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেনের সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তাঁরা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নন। বিগত সরকারের সময় তাঁদের সংগঠনের কার্যক্রমের কারণে অনেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হয়েছে। গত বছর ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তাঁদের সংগঠনের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। তাঁরা শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলার কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে বলে তিনি (ফারুক হোসেন) দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিন্টু সন্সের ম্যানেজার ও মামলার বাদী মাহমুদুল হক, মোশারফ আলী এবং ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে আল রাহাত উপস্থিত ছিলেন।