
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর ‘‘জুলিও কুরি’’ শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি শেরপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যে দিয়ে পালন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে বুধবার (২৮ মে ) সকাল ১০ টায় একটি বর্ণাঢ্য র্যালি জেলা প্রশাসনের কার্যালয় চত্বর থেকে বের হয়ে সুসজ্জিত পুলিশ বাদকদলের ব্যান্ডের তালে তালে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমির চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
বর্ণাঢ্য র্যালিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ আতিউর রহমান আতিক এমপি, মাননীয় হুইপ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ; জনাব সাহেলা আক্তার, জেলা প্রশাসক, শেরপুর; জনাব মোঃ কামরুজ্জামান বিপিএম, পুলিশ সুপার, শেরপুর; ডা. অনুপম ভট্টাচার্য, সিভিল সার্জন, শেরপুর; জনাব ছানোয়ার হোসেন ছানু, সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগ, শেরপুর-সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকতা, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করে।
পরবর্তীতে র্যালি উত্তর জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সভার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পুদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রামাণচিত্র প্রদর্শিত করা হয়। পরবর্তীতে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জনাব মোঃ কামরুজ্জামান বিপিএম, পুলিশ সুপার, শেরপুর মহোদয়।
পুলিশ সুপার মহোদয় তাঁর বক্তব্যের শুরুতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সহ ১৫ আগস্ট শাহাদাৎ বরণকারী বঙ্গবন্ধু’র পরিবারের সদস্য, জাতীয় চার শহীদ নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা তাঁদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
পরে বঙ্গবন্ধুর বর্ণিল জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকার পর ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করার কাজে মনোনিবেশ করেন। ওই সময় বিশ্ব মিডিয়ায় তাঁর বিষয়ে প্রবল আগ্রহ থাকায় তিনি আন্তর্জাতিক মনযোগের বলা যায় কেন্দ্রে ছিলেন।
এমন প্রেক্ষাপটে ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রেসিডেনশিয়াল কমিটির সভায় বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলন এবং বিশ্বশান্তির সপক্ষে বঙ্গবন্ধুর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রদানের জন্য শান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশ চন্দ্র প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। ১৪০টি দেশের ২০০ প্রতিনিধির সবাই সেই প্রস্তাব সমর্থন করেন।
এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিশ্ব শান্তি পরিষদ আয়োজিত আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের বিশাল সমাবেশে বিশ্বশান্তি পরিষদের তৎকালীন মহাসচিব রমেশচন্দ্র বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক পরিয়ে দেন। এই পদক ছিল জাতির পিতার কর্ম ও প্রজ্ঞার সবচেয়ে গৌরবদীপ্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। সেই অনুষ্ঠানে রমেশচন্দ্র বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলার নন, তিনি বিশ্বের এবং তিনি বিশ্ববন্ধু।’
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এ সম্মান কোনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য নয়। এ সম্মান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদদের, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানীদের। জুলিও কুরি শান্তি পদক সমগ্র বাঙালি জাতির।’
আমরা সর্বপ্রকার অস্ত্র প্রতিযোগিতার পরিবর্তে দুনিয়ার সকল শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের কল্যাণে বিশ্বাসী বলেই বিশ্বের সব দেশ ও জাতির বন্ধুত্ব কামনা করি। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এই নীতিতে আমরা আস্থাশীল পররাষ্ট্রনীতি কথা উল্লেখ করেন।
পুলিশ সুপার মহোদয় বলেন, জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর শান্তিবাদী নীতির আলোকেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। বাংলাদেশকে যাতে পরাশক্তিগুলোর ক্রীড়ানক হিসেবে ব্যবহৃত হতে না হয়, সে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করছেন। এ বিষয়ে তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বকে সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, কোনো যুদ্ধকে বাংলাদেশ সমর্থন করে না। তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরনার্থীকে যেভাবে আশ্রয় দিয়েছেন তা তাঁর বৈশ্বিক মাপের শান্তিবাদী নেত্রীর গুনাবলীকে তুলে ধরেছে। শান্তির দুত জুলিও কুরি পদকপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন তাঁর কন্যা বাস্তবায়িত করে যাচ্ছেন। এ আমাদের জন্য মহা গৌরবের কথা বলে উল্লেখ করেন।