
শেরপুর সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা দশআনী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে কামারেরচর ইউনিয়নের ৭ নম্বর চর গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজার, দুটি মসজিদসহ প্রায় অরধশত ঘরবাড়ি। ভাঙনের শিকার দুর্গম চরাঞ্চলের এসব মানুষ ফসলি জমি হারিয়ে এখন চরম আর্থিক-অনটন ও ঘরবাড়ি ভাঙনের আশঙ্কায় দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছেন। অনেকেই ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
শুক্রবার সদর উপজেলার ৭ নম্বর চর গ্রামে গিয়ে এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরেই বরষা মৌসুমে দশআনী নদীর ভাঙনে ৭ নম্বর চর গ্রামের বিভিন্ন এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। কিন্তু চলতি বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ও প্রবল স্রোতে দুই সপ্তাহ যাবত ৭ নম্বর চর গ্রামে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
এলাকাবাসী জানান, ৭ নম্বর চর গ্রামটিতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বাস করেন। এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষই কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জমিতে তাঁরা আমন ও বোরো ধান আর সারা বছরই সবজি আবাদ করে থাকেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ যাবত দশআনী নদীর ভাঙনে এই গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার ফসলি জমি ও ১০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সেইসঙ্গে জমিতে করা আমন ধান, সবজি ও পাট আবাদ বিনষ্ট হয়েছে। এতে কৃষকেরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন তাঁরা ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর ভাঙনে ৭ নম্বর চর গ্রামের বিশাল অংশ নদী গ্রাস করে নিয়েছে। বর্তমানে ৭ নম্বর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪০ বছরের পুরোনো ৭ নম্বর চর বাজার, দুটি মসজিদ ও শতাধিক ঘরবাড়ি নদীর ভাঙনের হুমকির সম্মুখিন। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, ভাঙনরোধে এখনই পদক্ষেপ না নিলে এসব স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
এ সময় ৭ নম্বর চর গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. সাইফুদ্দিন মণ্ডল বলেন, সাম্প্রতিক ভাঙনে তাঁর বাড়ির একাংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। এর আগেও একাধিকবার ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। প্রতিবার নদীর ভাঙনে বাড়ি পেছনের দিকে সরিয়ে নিলেও এবার আর জায়গা নেই। এবার বাড়ির সবটুকু ভাঙলে তাঁকে গৃহহীন হতে হবে।
৭ নম্বর চর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর এক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আর কোন আবাদি জমি নেই। বাড়িভিটা যেটুকু আছে সেটিও নদীর ভাঙনের হুমকির মুখে। বাড়িভিটা বিলীন হলে দিনমজুরি করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, উপজেলা নিরবাহী করমকরতা মেহনাজ ফেরদৌস ও কামারেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান ইতিমধ্যে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদরশন করেছেন।
কামারেরচর ইউপির ১ নম্বর ওয়ারডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় তাঁর গ্রামের বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।এভাবে নদী ভাঙতে থাকলে একসময় এখানে কোন আবাদি জমি থাকবে না। তাই ভাঙনরোধে এখানে একটি শক্ত বাঁধ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান তিনি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড, শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমদাদুল হক বলেন, ৭ নম্বর চর গ্রামে দশআনী নদীর ভাঙনরোধে জরুরী রক্ষণাবেক্ষণ করমসূচির আওতায় ২০০ মিটার কাজের অনুমোদন পাওয়া গেছে। এর অংশ হিসেবে শিগগিরই ভাঙনকবলিত এলাকায় ২০০ জিও ব্যাগ ফেলা হবে।