দেবাশীষ সাহা রায়, বিশেষ প্রতিনিধি
‘আশার তীর্থযাত্রী, ফাতেমা রাণী মা মারিয়া’ এই মূল সুরের উপর ভিত্তি করে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বারোমারী সাধু লিওর খ্রিস্টধর্মপল্লীতে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ফাতেমা রাণীর তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে পাপ স্বীকারের মধ্য দিয়ে দেশের রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় ‘ফাতেমা রাণীর তীর্থোৎসব’ শুরু হয়। শুক্রবার দুপুরে এই তীর্থযাত্রা শেষ হয়। এতে হাজার হাজার খ্রিস্টভক্ত অংশ নেন। তীর্থ এলাকা সাজানো হয়েছিল রঙিন আলোকসজ্জায়। আর নিরাপত্তা জোরদারে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভিন্ন ভিন্ন মুল সুরে দুই দিনব্যাপী পালিত হয় ফাতেমা রাণীর বার্ষিক তীর্থোৎসব। শুধু শেরপুর জেলা নয় দেশের বিভিন্ন জেলা এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান পুণ্যার্থীরা এই তীর্থযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। এখানে স্থাপন করা হয় দেশের অন্যতম বৃহৎ ৫৫ ফুট উচুঁ মা মারিয়ার প্রতিকৃতি। এর সামনে রয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। সেখানে রাতদিন প্রার্থনা করেন খ্রিস্টভক্তরা।
এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে আলোক শোভাযাত্রা। বৃহস্পতিবার রাত আটটায় হাজার হাজার খ্রিস্টভক্তদের অংশগ্রহণে মোমবাতি জ্বালিয়ে বর্ণিল আলোক শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। তখন পুরো পাহাড়ি এলাকা মোমবাতির আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে। এছাড়া পাপ স্বীকার, জপমালার প্রার্থনা, নিশি জাগরণ, জীবন্ত ক্রুশের পথ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় মহা খ্রিস্টযাগ অনুষ্ঠান। এবারের তীর্থোৎসবে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভ্যাটিকানের এম্বাসেডর ও পোপের বিশেষ প্রতিনিধি আর্চবিশপ কেভিন রেনডাল।
আয়োজক কমিটির সমন্বয়ক ও বারোমারী মিশনের পালপুরোহিত রেভারেন্ড ফাদার তরুণ বনোয়ারী জানান, এই তীর্থস্থানটি পর্তুগালের ফাতেমা নগরের আদলে ও অনুকরণে নির্মিত হয়েছে। সাধু লিওর ধর্মপল্লিকে ১৯৯৭ সালে ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এখানে তীর্থোৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ফাতেমা রাণীর করুণা ও দয়া লাভের আশায় সারাদেশ থেকে তীর্থযাত্রীরা এখানে সমবেত হন। তাঁরা সমাজের অন্যায়, অবিচার, রোগবালাই থেকে মুক্তি ও পবিত্র জীবনের দীক্ষা নিতে এবং নিজেদের পাপ মোচনের জন্য প্রার্থনা করেন।
এদিকে, তীর্থোৎসবের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র্যা ব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি ও স্থানীয় প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন। শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ভূঞা বৃহস্পতিবার রাতে তীর্থ এলাকা পরিদর্শন করেন।








