
ঝিনাইগাতী প্রতিনিধি হারুনুর রশিদ:
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার চেঙ্গুরিয়া (কালিবাড়ী বাজার) বৃটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনো হয়নি লক্ষনীয় উন্নয়ন। বৃহৎ এই বাজারটিতে নেই কোন ব্যাংকের শাখা। এছাড়াও প্রয়োজনীয় শেড, শৌচাগার, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। প্রয়োজনীয় জায়গার অভাবে
কাঁচা বাজার, মাংস হাঁটি বসে মহাসড়কের পাশে। এছাড়াও গরুর হাটে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে প্রতি বছর ঈদের সময় কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতা বিক্রেতার ভিড়ে আঞ্চলিক মহাসড়কে যানজট লেগে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা।
জানা যায় চেঙ্গুরিয়া বাজারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বৃটিশ শাসনামলে। এলাকাবাসী সার্বিক প্রচেষ্টায় ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বৃহৎ ধানহাটি। এরপর ১৯৮৪ সাল থেকে সরকারি ডাকের আওতায় আসে এবং সেসময় মাছ-মাংস হাটির জন্য ১০ শতাংশ ও ধান হাটির জন্য আলাদা ২৫ শতাংশ জমির ব্যবস্থা সহ একটি শেড নির্মাণ করে ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ। এরপর সেই পুরাতন ধানহাটিতেই গরুর হাট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ১৫ বছর আগে। এটি এখন শেরপুর জেলার একটি অন্যতম প্রধান গরু-ছাগলের হাট। প্রতি বছর এই হাট থেকে সরকার ৩০/৩৫ লাখ টাকা রাজস্ব পাচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় বাজারের অবকাঠামোর উন্নয়ন আর তেমন হয়নি। এতো বড় একটি ব্যবসাকেন্দ্রে নেই কোন ব্যাংক শাখা।
এ ব্যাপারে বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসী বলেন, “সরকার এই হাট থেকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব পায়। কিন্তু বাজারের কোন উন্নয়ন কাজে নজর নেই। বর্তমানে বাজারটিতে পাঁচ শতাধিক স্থায়ী দোকান রয়েছে। বিসিআইসির ডিলার, মৎস্য ও পোল্ট্রি খাদ্যের বড় বড় কয়েকজন ডিলার রয়েছে। এছাড়াও এই এলাকায় অন্তত ৫০টি ছোট-বড় মৎস্য ও পোল্ট্রি খামার এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে দৈনিক গড়ে প্রায় ৪০/৫০ লাখ টাকার লেনদেন হয়। কিন্তু এখানে কোন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান না থাকায় ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর ধরে ভোগান্তিতে রয়েছে। তাদের ব্যাংকিং কাজের জন্য যেতে হয় ১০ কিলোমিটার দূরের জেলা শহর অথবা ১২ কিলোমিটার দূরের ঝিনাইগাতী উপজেলা শহরে। সবচেয়ে বেশী প্রভাব পরে ঈদে কুরবানীর পশুর হাটে। বছরের পর বছর ধরে এলাকাসী একটি ব্যাংক শাখার জন্য দাবি করে আসছেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এই দাবি পূরণ না হওয়ায় ক্রেতা ও বিক্রেতারা নগদ টাকা বহনে ঝামেলায় পড়ে তারা এখন ক্ষুব্ধ।
ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থান থেকে কুরবানীর হাটে গরু কিনতে আসা পাইকারদের কয়েকজন বলেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। আমারা সারা বছরই এই হাটে কেনাকাটা করি। এখানে ব্যাংক না থাকায় নগদ টাকা নিয়ে আসতে হয় যা আমাদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।”
হাটের ইজারাদার মোঃ হেলাল উদ্দিন জানান, বড় পাইকাররা ব্যাংকের অভাবে নগদ টাকা নিয়ে আসতে সাহস পায়না। একটি ব্যাংক হলে বাজারটির ব্যবসাপত্র অনেক বৃদ্ধি পেতো। পাশাপাশি বাজারের গরু হাটির জায়গা সম্প্রসারণ, মাটি ভরাট, কাঁচা বাজারের জন্য জায়গার ব্যবস্থা করা ও শেড নির্মাণ এবং টয়লেট ও রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান তিনি।
বিসিআইসির সার ডিলার আলহাজ্ব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, লাখ লাখ টাকা নিয়ে ১০/১২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ব্যাংকিং করতে হয়। এতে আমার মতো অনেক ব্যবসায়ীকে টাকা ছিনতাই হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। বাজারটিতে একটি ব্যাংক শাখা প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানাচ্ছি।”
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বলেন,” ইউনিয়ন পরিষদে প্রাপ্ত সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দ খুব সীমিত। মাটি ভরাট সহ ছোট ছোট কিছু কাজ করেছি। বাজারের জায়গার ব্যবস্থা করা, শেড-শৌচাগার-ড্রেন নির্মাণ সহ একটি ব্যাংক শাখা প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি।”
এ ব্যাপারে শেরপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আলহাজ্ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, “চেঙ্গুরিয়া বাজারটি জেলার মধ্যে একটি অন্যতম প্রধান বাজার, যা থেকে সরকার প্রতি বছর বড় অংকের রাজস্ব পেয়ে থাকে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই বাজারটির খুবই অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে।” এখানে ব্যাংকের শাখা স্থাপন সহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
বাজারটিতে একটি ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে অগ্রণী ব্যাংকের উপ মহাব্যবস্থাপক ও অঞ্চল প্রধান শেরপুর, মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ বলেন, “এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ী মহল থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আবেদন করা হলে তদন্তের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাই করে অগ্রণী ব্যাংকের শাখা স্থাপন করা যেতে পারে।”
ঝিনাইগাতীর ইউএনও মো. আশরাফুল ইসলাম রাসেল বলেন, “চেঙ্গুরিয়া বাজারটি জেলার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। ঝিনাইগাতী উপজেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বাজার থেকে প্রতিবছর বেশ বড় অংকের সরকারি রাজস্ব পাওয়া যায়। বাজারটির উন্নয়নে ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হবে।”