
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার সংবাদ জানতে পেরে বিষপানে মায়ের (৩২) আত্মহত্যার চেষ্টা করার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা বাকাকুড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিষপানের ফলে গুরুতর অসুস্থ মাকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ধর্ষণ চেষ্টার শিকার ভুক্তভোগী কিশোরী (১৪) উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের একটি গ্রামের এক দরিদ্র কামারের মেয়ে। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশ কেন্দ্রের জঙ্গলে মো. ইলিয়াছ (২৫) নামের এক যুবক কিশোরীটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীর অভিভাবক সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে কিশোরীটি তার ৩-৪ জন বান্ধবীর সঙ্গে ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশ কেন্দ্রে বেড়াতে যায়। তখন কিশোরীটির পূর্বপরিচিত যুবক ইলিয়াছ কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেন। এক পর্যায়ে ইলিয়াছ তাঁর দুই সহযোগীর সহায়তায় কিশোরীটিকে গজনী অবকাশের জঙ্গলের ভিতরে নিয়ে যান এবং তাকে (কিশোরী) জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় কিশোরীর ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে কিশোরীটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেন।
এদিকে ঘটনার তিন দিন পর মঙ্গলবার দুপুরে মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার বিষয়টি জানতে পারেন ওই কিশোরীর মা। এতে মানসিকভাবে ভীষণ আঘাত পান তিনি। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার বিকেলে সবার অলক্ষ্যে কিশোরীটির মা বাড়ির অদূরে গারো পাহাড়ে যান এবং সেখানে বিষপান করেন। পরে খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে পরিবারের লোকজন ওই কিশোরীর মাকে প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় গারো পাহাড়ে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে স্বজনেরা তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে জেলা সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করান। বর্তমানে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে কিশোরীর মা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জেলা সদর হাসপাতালে অবস্থানরত ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা মঙ্গলবার রাতে বলেন, মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার বিষয়টি জানতে পেরে মনের দুঃখ ও কষ্টে তাঁর স্ত্রী বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
জেলা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ফাগুন মঙ্গলবার রাত ১২টায় বলেন, মারাত্মক বিষপান করায় ওই নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল আমিন মঙ্গলবার গভীর রাতে বলেন, এ ঘটনায় থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। স্থানীয় যুবক ইলিয়াছ কিশোরীটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেন বলে ভুক্তভোগী পুলিশকে জানিয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বুধবার তাকে (কিশোরী) জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় জড়িত ইলিয়াছ ও তাঁর সহযোগীদের আটকের জন্য পুলিশ চেষ্টা করছে। পুলিশ ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখছে।