৭ ডিসেম্বর শেরপুর পাক হানাদার মুক্ত দিবস

 

৭ ডিসেম্বর শেরপুর পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলার সূর্যসন্তান মুক্তিযোদ্ধারা শেরপুর অঞ্চলকে শত্রু মুক্ত করেন। এদিন ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার ও মিত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা হেলিকপ্টারযোগে শেরপুর শহীদ দারোগ আলী পৌরপার্ক মাঠে অবতরণ করেন। ওই সময় শেরপুরের মুক্তিকামী ছাত্রজনতা জেনারেল অরোরাকে এক সংবর্ধনা দেন। তিনি সংবর্ধনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে শেরপুরকে হানাদারমুক্ত বলে ঘোষণা দেন। ওইসময় মুক্ত শেরপুরে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

জানা যায়, ৭ মার্চ স্বাধীনতা ডাক দেওয়ার পর দেশের অন্যান্য স্থানের মত শেরপুরবাসী পুরোপুরি যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণে উদ্ধুদ্ধ হয়। স্বাধীনতাকামী ছাত্রজনতা যেকোন কিছুর বিনিময়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলা করার দৃঢ় প্রত্যয়ে দৃপ্ত হয়। এদিকে ২৬ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে পাক হানাদার বাহিনী ব্যাপক মর্টারশেলিং এর মাধ্যমে শেরপুর শহরে শনিবিগ্রহ মন্দিরের পূরোহিতকে গুলি করে হত্যা করার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে। পাক সেনারা স্থানীয় দালালদের সহায়তায় শহরের দোকান-পাট লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, দখল ও নির্মমভাবে হত্যাসহ ধর্ষণ প্রভৃতি অত্যাচার চালায়। ১১নং সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় লড়াই চালিয়ে আসছিল এবং ২৪ অক্টোবর কামালপুর অবরোধ শুরু হয়। এছাড়াও ওই আক্রমণের রণ-কৌশল ছিল ভিন্ন ধরনের।
১৩ নভেম্বর কর্নেল তাহের কামালপুরের উপর পূর্ণ আক্রমণের নির্দেশ দেন। কারণ কর্ণেল তাহেরের নেতৃত্বাধীন ১১নং সেক্টরের মূল পরিকল্পনা ছিল কামালপুর, শেরপুর, জামালপুর এবং টাঙ্গাইলের ওপর ক্রমানুযায়ী আক্রমণের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া, যাতে করে ঢাকায় চূড়ান্ত আঘাত হানা যায়। ১৪ নভেম্বর ভোরে আবার যুদ্ধ শুরু হলে শেরপুর-বকশীগঞ্জ সড়কের মাঝপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে দুই প্লাটুন সৈন্যসহ পাকবাহিনীর মেজর আইয়ুব আহত হন। এদিন বিজয়ের মাঝামাঝি সময়ে তুমুল সম্মুখযুদ্ধে পাকসেনাদের কামানের গোলার আঘাতে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের আহত হয়ে একটি পা হারান।

২৪ নভেম্বর শেরপুর সদর থানার কামারিয়া ইউনিয়নের সুর্যদী গ্রামে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাসহ ৪৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের অব্যাহত অবরোধের মুখে ৪ ডিসেম্বর কামালপুর ঘাঁটির পাক সেনারা আত্মসর্মপণ করে। এদিকে কামালপুর দুর্গ পতনের পর পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে পড়ে। সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতীর শালচূড়া ক্যাম্প ও আহাম্মদনগর ঘাটির পাকসেনারা পিছু হটতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে শেরপুর থেকে পিছু হটে জামালপুর পিটিআই ক্যাম্পে গিয়ে জমায়েত হয়। এভাবে রাতের আধাঁরে শেরপুর পাকবাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় এবং ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে শেরপুর মুক্ত হয়।

  • Related Posts

    শেরপুরে বাস চাপায় সাবেক সেনা সার্জেন্ট নিহত, বাসে অগ্নিসংযোগ

      বিশেষ প্রতিনিধি : শেরপুর জেলার সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কের হাওড়া বাশতলা এলাকায় ১৫ জুন রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা গামী একটি যাত্রীবাহী বাস নং ঢাকা-মেট্টো-ব-১৫-৫১৯২ সাম্মী…

    শেরপুর জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

    বিশেষ প্রতিনিধি : শেরপুর জেলা পুলিশের আয়োজনে পুলিশ সদস্যদের শারীরিক সক্ষমতা ও কর্মক্ষেত্রে সুদৃঢ় মনোবল বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১৫ জুন) পুলিশ লাইনস্ প্যারেড গ্রাউন্ডে সকাল ৮…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    তাজা খবর:-

    শেরপুরে বাস চাপায় সাবেক সেনা সার্জেন্ট নিহত, বাসে অগ্নিসংযোগ

    শেরপুরে বাস চাপায় সাবেক সেনা সার্জেন্ট নিহত, বাসে অগ্নিসংযোগ

    শেরপুর জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

    শেরপুর জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত

    শেরপুরের কানাশাখোলায় তারেক রহমান ও ইউনুসের বৈঠকে নির্বাচনি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল সমাবেশ

    শেরপুরের কানাশাখোলায় তারেক রহমান ও ইউনুসের বৈঠকে নির্বাচনি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল সমাবেশ

    শেরপুরে তারেক রহমানের ৩১ দফা রূপরেখা বাস্তবায়নের প্রচারণায় র‌্যালি-সমাবেশ

    শেরপুরে তারেক রহমানের ৩১ দফা রূপরেখা বাস্তবায়নের প্রচারণায় র‌্যালি-সমাবেশ

    শেরপুরে ঝড়ের তান্ডবে অসহায় বিধবা মহিলার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত

    শেরপুরে ঝড়ের তান্ডবে অসহায় বিধবা মহিলার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত

    নালিতাবাড়ীতে বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু

    নালিতাবাড়ীতে বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু

    দুঃখিত কপি করা যাবে না! ⚠️