
শেরপুরে তেঘরিয়া মাদ্রাসায় দুর্নীতি ও অনিয়মের দাবী তুলে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় ছাত্র-জনতা। ২সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ১০ টায় অত্র মাদ্রাসা মাঠে উক্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
শেরপুর জেলার সদর উপজেলাধীন গাজিরখামার ইউনিয়নের অধীনে অবস্থিত কুমরী তেঘরিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা তুলে ধরেন মানববন্ধনকারী ছাত্র-জনতা।

মানববন্ধনকারীদের পক্ষে স্থানীয় বাসিন্দা মো: আবুল কাসেম বলেন, আমার কোনো ব্যাক্তিগত দাবি নেই। এই দাবি এলাকাবাসী সকলের দাবি। দুই যুগ থেকে দেখে আসছি মাদ্রাসায় বিভিন্ন ভাবে দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে। এই মাদ্রাসার আওতায় ৭-৮ একর জমি রয়েছে সেগুলো থেকে যে অর্থ আসে সেটাও কোনো হিসাব নাই। মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থী নাই। আমরা চাই মাদ্রাসায় দুর্নীতি আর অনিয়ম অপসারণ করে মাদ্রাসাকে পূর্বের ঐতিহ্যে ফিরিয়ে আনতে। এখানে অনেক দিন থেকেই মাদরাসায় কোনো অধ্যক্ষ নেই। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রয়েছেন কিন্তু তিনিও মাদ্রাসায় আসেন না ঠিকমত। আজকে এর সঠিক সমাধান পেতেই আমরা স্থানীয় জনতা মানববন্ধনে এসেছি।

উক্ত মানববন্ধনের অন্যতম সংগঠক মো: আনিছ বলেন, প্রতিবাদ করতে আসলেই এইখানে নানান মামলা, হুমকির শিকার হতে হয়। আমাদের বাবা-ছেলের নামেও বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের অধিকার বুঝে পেতে চাই। আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে (১) দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। (২) নিয়োগ বাণিজ্য চলবে না। (৩) শিক্ষকমুক্ত করতে হবে। (৪) শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধনে উপস্থিত গাজিরখামার ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো: হেলাল সাহেব তার বক্তব্যে বলেন, মাদ্রাসায় ঠিকমত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই। শিক্ষকদের উপস্থিতি অনেকাংশেই কম। স্থানীয়দের মুখে নানান সময় দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা শুনে আসছি। আমরা চাই মাদ্রাসায় আগের মত শিক্ষার্থী ফিরে আসুক। মাদ্রাসায় যদি কেউ অনিয়মের সাথে জড়িত প্রমাণিত হয় তাদের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

উপস্থিত স্থানীয় নজরুল ইসলাম মাস্টার বলেন, আমরা দুই পক্ষের সাথে কথা বলে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই। ছাত্র-জনতার দাবি ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব প্রাপ্তদের কথার পেক্ষিতে দুই পক্ষকে সমাধানে আসার আহবান জানান তিনি।

অন্যদিকে উক্ত মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো: বিল্লাল হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবি করে মুখোশদারী কিছু সন্ত্রাসী মাদ্রাসায় এসে অন্যায়ভাবে উলামালীগ, দুর্নীতিবাজ এই রকম কথা বলে শিক্ষকদের অপমান অপদস্ত করেন। এমতাবস্থায় এলাকাবাসী উক্ত কাজের বিরোধিতা করলে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীগণ লাঠি-শোটা নিয়ে এসে এলাকাবাসীর উপর হামলা করেন। প্রতিষ্ঠান চলাকালে এলাকাবাসীর উপর এমন সন্ত্রাসী হামলার সঠিক বিচার কামনা করছি।
উক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক আল মামুন বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেরপুর জেলা সমন্বয়কদের সাথে যোগাযোগ করলে সমন্বয়কগণ জানান এমন কর্মসূচি সম্পর্কে তারা অবগত নন।

উক্ত মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা সামিউল ইসলাম বলেন, কোভিট-১৯ এর সময় শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যায়। এছাড়াও শিক্ষকদের নামে বিভিন্ন হয়রানি মূলক মামলা থাকায়, পাশাপাশি আমি নিজেও কিছুদিন আগে জেল খেটেছি। কিছুদিন আগেও সাবেক এমপিসহ এলাকার কয়েকজন এসে বিভিন্ন নথিপত্র দেখেন। তিনি আরো বলেন, এখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যেহেতু সরকার পরিবর্তন হয়েছে। আপনারা আমাদেরকে সময় দেন, আমরা শিক্ষার্থীদের উপস্থিত নিশ্চিত করবো, শিক্ষকরা নিয়মিত আসছেন। এবং বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে নতুন অধ্যক্ষ অতি দ্রুত নেওয়া হবে। অন্যান্য সকল সমস্যা সমাধানে আমরা একসাথে করবো এ মর্মে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।