
শেরপুরে ২শ বছরের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে শেরপুর পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ডের নবীনগর মহল্লায় এলাকাবাসীর আয়োজনে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলাটি উদ্ভোদন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো: আতিউর রহমান আতিক এমপি। মেলায় বিভিন্ন পিঠা, মিষ্টি, সাজ, মুখরোচক খাবারসহ বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন মজাদার খাবারের দোকান বসে। এ ছাড়া শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মাটির তৈরী আসবাব ও মেয়েদের প্রসাধনী সামগ্রী, চুড়ি-মালার দোকান সাজিয়ে বসে দোকানীরা। প্রচুর দর্শক থাকায় বেচা-বিক্রিও হয় বেশ ভালো। মেলায় গ্রামের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভিড় জমায়। এদিকে মেলার আশপাশে স্থানীয় গ্রামবাসীর ঘরে ঘরে চলে পিঠা-পায়েশ খাওয়ার উৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে প্রতি বাড়িতেই দূর-দূরান্তের আত্মীয়রা বেড়াতে আসেন এবং পিঠা-পায়েশ খাওয়ার উৎসবে যোগ দেন। একসময়ের বাঙ্গালির ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই এলাকার মানুষ তাদের পূর্ব পুরুষদের রেওয়াজ অনুযায়ী ভোরে উঠে হলুদ ও সর্ষে বাটা দিয়ে গোসল করতেন এবং বাড়ির মেয়েরা ব্যস্ত থাকেন পিঠা-পায়েস তৈরীতে। দিন ব্যাপী চলতো অতিথি আপ্যায়ন এবং বিকেলে ছুটে যেতেন গ্রামের মেলার মাঠে। তবে এখন হলুদ সর্ষের রেওয়াজ আর না থাকলেও আগের সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে অনেক বাড়িতেই আত্মীয়-স্বজনদের আগমন ও পিঠা উৎসবের রেওয়াজ রয়ে গেছে। এখনো জেলার বাইরে অবস্থানরত এই এলাকার নারী-পুরুষ মেলা উপলক্ষে শেরপুর চলে আসেন। বিবাহিত মেয়েরা বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন এ মেলা উপলক্ষে। শহর থেকে একটু দূরে এবং পৌর এলাকার মধ্যে এ মেলার আয়োজন করা হলেও কোন রকম প্রচারণা চালানো ছাড়াই উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় মেলায়। কত বছর পূর্বে এ মেলার প্রচলন হয়েছিল তা কেউ সঠিক করে বলতে না পারলেও প্রায় ২শ বছরের উপরে হবে বলে স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ ও গ্রামবাসী মনে করেন। এ মেলা মূলত ৩০ পৌষ অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তির মেলা হয়ে থাকে। মেলায় প্রতি বছর অন্যতম আকর্ষণ ঘোর দৌড়ের পাশাপাশি গাঙ্গি খেলা ও সাইকেল রেস, কুস্তি খেলা মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা হয়। দিন দিন এ মেলার আকর্ষণ ও লোক সমাগমও বাড়ছে বলে আয়োজকরা জানায়। এবার শেরপুর জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসে ঘোড় সওয়াররা। অপরদিকে গাঙ্গি খেলা, মিউজিক্যাল চেয়ার ও সাইকেল রেস, কুস্তি খেলায় খেলোয়াড় অংশ নেয়।