
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুরের ৩টি আসনে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর ভোটের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা। তারা স্ব-স্ব এলাকায় পথসভা ও গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে একদিকে ভোটাররা যেমন ভোট উৎসবে অংশ নিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন, অন্যদিকে তেমনি এলাকায় ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে নির্বাচনের আমেজ।
শেরপুর-১ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা, জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছেন। এছাড়াও এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী আরো ৪ জন প্রার্থী রয়েছে।
শেরপুর-১ (সদর) আসনটি সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা নিয়ে গঠিত। জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ৮৬৩ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৯ জন।
সদর-১ আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীসহ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৭ জন। তারা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক (নৌকা), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. মাহমুদুল হক মনি (লাঙল), কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ মনোনীত প্রার্থী বারেক বৈদেশী (গামছা), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম মনোনীত প্রার্থী এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (নোঙর), বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি-বিএসপি মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ (একতারা), তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. ফারুক হোসেন (সোনালী আঁশ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানুয়ার হোসেন ছানু (ট্রাক)।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী হুইপ আতিউর রহমান আতিক টানা ৫ বারের সংসদ সদস্য এবং দুদফায় প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় হুইপ থাকায় নির্বাচনী এলাকায় শতভাগ বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট এবং প্রায় অর্ধশতাধিক স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নসহ এলাকায় নজরকাড়া উন্নয়ন সাধন করেছেন। কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা হুইপ আতিক সাধারণ জীবন-যাপনের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখে উঠাবসা করায় তিনি একদিকে যেমন এলাকায় মাটি ও মানুষের নেতা হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন, তেমনি ভোটের রাজনীতিতেও হয়ে উঠেছেন হিরো।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও রেলপথ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উন্নয়নের ষোলকলা পূর্ণ করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নির্বাচনী মাঠে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। গণসংযোগের পাশাপাশি নানা নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে যোগ দিচ্ছেন। তার পক্ষে দলের জেলা, উপজেলা, শহর, ইউনিয়ন ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমেছেন।
এ আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী মাহমুদুল হক মনি একজন তরুণ শিল্পপতি ও চরাঞ্চলের অধিবাসী হলেও রাজনীতিতে নবীন। প্রায় এক বছর আগে দলে যোগ দিয়ে হয়েছেন জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক। এ আসনটি পরপর ৩ দফায় লাঙলের দখলে থাকায় এলাকায় বিশেষ করে চরাঞ্চলে জাপার এখনও একটা অবস্থান রয়েছে। এক্ষেত্রে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জোরালোভাবে জাপা প্রার্থী মাঠে রয়ে গেলে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর ভোট বিভক্তির সুযোগে তিনিও মূল লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে পারেন।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়েও এবার স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নৌকার মুখোমুখি হয়েছেন সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানুয়ার হোসেন ছানু। তার সাথে মাঠে নেমেছেন দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ। ভোটের রাজনীতিতে এ আসনটি নৌকার ঘাটি হিসেবে পরিচিত পূর্বাঞ্চল ও নৌকাবিরোধী হিসেবে পরিচিত পশ্চিমাঞ্চলে বিভক্ত। পূর্বাঞ্চলের প্রার্থী আতিউর রহমান আতিক (নৌকা) আর পশ্চিমাঞ্চলের ছানুয়ার হোসেন ছানু (ট্রাক) ও লাঙ্গলের প্রার্থী মাহমুদুল হক মনি। এছাড়াও একই এলাকায় রয়েছেন বিএনএম প্রার্থী এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
শেরপুর সদর আসনে নৌকা, লাঙল ও ট্রাক প্রতীকের সাথে ভোটের মাঠে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারছে না নোঙর, গামছা, সোনালী আঁশ ও একতারা- এমনটাই দেখা যাচ্ছে।