
নওগাঁ প্রতিনিধিঃ– সূচের ফোঁড়ে আগামীর স্বপ্ন বুনছেন গুচ্ছ গ্রামের নারীরা। তাদের নিপুন হাতে তৈরি নকশি কাঁথার চাহিদা বাড়ছে। নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ি গুচ্ছ গ্রামের নারীদের এসব নকশি কাঁথা বিক্রি হচ্ছে দেশ-বিদেশে। আর এ গুলো তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন তারা। গুচ্ছগ্রামের মানুষ জমি চাষাবাদ,গরু-ছাগল পালন ও মাছ শিকার,ব্যটারী চালিত অটো রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এসব কাজে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নেন। কিন্তু অনেক নারী বেশি পরিশ্রমের কাজ করতে পারেন না। তাই তারা বাড়িতে বসে নকশি কাঁথা সেলাই করেন। এগুলো বিক্রি করে সংসারের অভাব দূর করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,শীতে গুচ্ছগ্রাম গুলোতে নকশি কাঁথা বেশি তৈরি হচ্ছে। এসব কাঁথা তৈরি হয় নতুন,পুরাতন কাপড় ও নানান রঙের সুতা দিয়ে। পুরানো কাপড় কয়েক ভাঁজ করে চার দিকে সেলাই করে আটকে নেওয়া হয়। তারপর সেলাইয়ের সমান দূরত্ব বজায় রেখে প্রথমে বড় বড় ফোঁড় দিয়ে দিয়ে কাপড়ের চারিদিকে আটকানো হয়। তারপর নকশা দিয়ে সেলাই শুরু হয়। নকশি কাঁথার নকশিগুলোর বিভিন্ন নাম রয়েছে। রান ফোঁড়,ডবল রান, তেরছা ফোঁড়,বৈকা ফোঁড়সহ রয়েছে আরও অনেক নাম। এসব নকশি কাঁথায় কেউ বা আবার সেলায়ের মাধ্যমে ফুটে তোলেন গ্রাম বাঙলার নানা ঐতিহ্য। সুন্দর নকশি কাঁথা তৈরি করে নেওয়ার পর নিজেদের ব্যবহারের পাশাপাশি মেয়ের জামাই বাড়িতে পাঠান কেউ কেউ।
কাঁথ তৈরির কারিগর রিনা বেগম বলেন, কাশিয়াবাড়ি গুচ্ছগ্রামের অনেক মানুষ ঢাকায় থাকেন সে কারনে ঢাকা শহরে থাকা অনেকেরই আত্নীয়-স্বজনরা আমাদের কাছে কাঁথা সেলাই করতে দিয়ে যায়। সেই কাঁথা আট শত থেকে এক হাজার টাকা মজুরির বিনিময়ে আমরা সেলাই করি। মাঝারি একটা কাঁথা সেলাই করতে বিশ-থেকে পঁচিশ দিন লাগে।
মৌও খাতুন তিনি থাকেন বাবা- মায়ের সথে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী। লেখা পড়ার পাশাপাশি মায়ের সাথে কাঁথা সেলাই কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। প্রকৃত তার মা মাজেদা বেগম কাঁথা সেলাই করে সংসার চালান তিনি। আনোয়ারা বেগম জানান, বিশেষ নকশি কাঁথা সেলাই করতে প্রায় দুই মাস পযন্ত সময় লাগে। রকম ভেদে নকশি কাঁথার মজুরি দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পযন্ত নেওয়া হয়।
নওগাঁ জেলার সদর,কাশিয়াবাড়ি,তিলাবাদুরি,সাহেবগঞ্জ- মধুগুড়নই,জয়সাড়া , মির্জাপুর গুচ্ছ গ্রামের বহু বেকার নারীরা নকশি কাঁথা সেলাই করে হাজার হাজার টাকা আয় করছে।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্জিতা বিশ্বাস জানান, গুচ্ছগ্রামের অনেক নারীরা কাঁথা সেলাই করে তাদের সংসারের অভাব দূর করছেন। তবে তারা সু-সংগঠিত হতে পারলে অবশ্যই সরকারের দেওয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধ দেওয়া সম্ভব।