
দেবাশীষ সাহা রায়, বিশেষ প্রতিনিধি
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় ভারি বর্ষণ ও সীমান্তের ওপাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে ১১ পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়েছে।
বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো স্থানীয় একটি বিদ্যালয় ভবনে আশ্রয় নিয়েছে ।
এদিকে মহারশি নদীতে ঢলের পানিতে ডুবে মারা যাওয়া কিশোর ইসমাইল হোসেনের নলকুড়া এলাকার বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের হাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল ।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবল তোড়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মহারশি নদীর ব্রীজপাড় সংলগ্ন খৈলকুড়া এলাকায়
নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। একইসঙ্গে নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে পাড় উপচে ঝিনাইগাতী সদর বাজারে প্রবেশ করে।
এতে মুহূর্তের মধ্যে ভেসে যায় অন্তত ১১টি পরিবারের বসতভিটা। ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি, ভেসে যায় ৫০টিরও বেশি মাছের ঘের।
ঢলের পানিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয় ৩৪৫ হেক্টর জমির আমন আবাদ ও ১০ হেক্টর জমির সবজি খেত এবং আংশিক নিমজ্জিত হয় ৫৭৫ হেক্টর জমির আমন আবাদ ও ২৫ হেক্টর সবজি খেত। এক দিনেই সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে অনেক পরিবার।
ক্ষতিগ্রস্ত খৈলকুড়া এলাকার বিধবা নারী রহিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ঢলের পানিতে তাঁর সব কিছু নিয়ে গেছে, সব শেষ হয়ে গেছে। তিনি এখন
কোথায় যাবেন? গত দুই বছরে তিনবার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁর ঘরবাড়ি।
এবারও মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিয়েছে পাহাড়ি ঢল।
ভেসে গেছে তাঁর দুটি ঘর, ফসলি জমি ও সামান্য আসবাবপত্র। সরকারি সাহায্য ছাড়া এখন তাঁর আর চলার উপায় নেই বলে জানান তিনি।
ঝিনাইগাতী বণিক সমিতির সভাপতি মো. মোখলেছুর রহমান খান বলেন, প্রত্যেক বছরই বর্ষা মৌসুমে মহারশি নদীর পানিতে প্লাবিত হয়ে বাজারের কয়েক শত
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন স্থানীয়
ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। হঠাৎ নেমে আসা ঢলে ডুবে যায় অনেক দোকানপাট, নষ্ট হয় মালামাল। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে মহারশি নদীর পাশে একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ, দোকানঘরের মেঝে উঁচু করা ও প্রয়োজনীয় সংস্কার, বাজার এলাকায় টেকসই ড্রেন নির্মাণের জোর
দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ২০২২ সালের ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলে ব্রিজপাড়ের এই বাঁধ ভেঙে গেলেও সংস্কার হয়নি। তাই এ বছর আবারও একই জায়গায়
ভাঙন দেখা দিল। বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন করেও কাজ হয়নি।
পাউবো, শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান বলেন, মহারশি নদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্যে উদ্ধর্তন কতৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ঝিনাইগাতীর ইউএনও মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, গত তিন দিন বৃষ্টি না হওয়ায় নদীর পানি কমে এসেছে ও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সহায়তা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।