দেবাশীষ সাহা রায়:
‘আমার ছোট ভাই রিফাত খুব মেধাবী ছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি ওর আগ্রহ ছিল বেশ। সে বিএনসিসিও করত। ওর স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে বিমানের পাইলট হবে। কিন্তু পানিতে ডুবে রিফাতের অকালমৃত্যুতে আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে রিফাতের পাইলট হওয়ার স্বপ্নও পানিতে তলিয়ে গেছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বৃহস্পতিবার কথাগুলো বলছিলেন মৃত তাহমিদুল ইসলাম রিফাতের (১৬) বড় ভাই ও জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লাভলু আহম্মেদ।

বকশীগঞ্জ উপজেলায় বড় ভাই লাভলুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গতকাল বুধবার পুকুরের পানিতে ডুবে রিফাতের মৃত্যু হয়। সে শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমি থেকে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রিফাত ও তার চার বন্ধু বকশীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরের পুকুরে গোসল করতে নেমেছিল। একপর্যায়ে ডুবে যায় রিফাত। অনেক সময় পরও তাকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এসে বেলা তিনটার দিকে রিফাতের লাশ উদ্ধার করে।
রিফাত শেরপুর পৌরসভার দীঘারপাড় এলাকার বাসিন্দা ছিল। পরিবারের সঙ্গে সেখানেই থাকত সে। চারজনের মধ্যে সবার ছোট সন্তান রিফাতের মৃত্যুতে শোকে যেন স্তব্ধ পুরো পরিবার। বৃহস্পতিবার দুপুরে রিফাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটু পরপর চিৎকার করে কাঁদছেন রিফাতের মা ফাতেমা বেগম। স্মৃতির কথা টেনে বারবার তিনি রিফাতের কথা বলছিলেন। এ সময় ফাতেমা বেগমকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন রিফাতের বোন ও স্বজনেরা। ছেলের মৃত্যুতে রিফাতের বাবা আবদুল হালিম সরকার নির্বাক বসে আছেন এক কোণায়।
রিফাতের বড় ভাই লাভলু আহম্মেদ বলেন, ‘বুধবার সকাল ১০টার দিকে বকশীগঞ্জের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় রিফাত আমাকে বলে, বন্ধুদের সঙ্গে সে উপজেলা পরিষদের পুকুরে গোসল করতে যাবে। আমি আর আম্মা তাকে বারণ করেছিলম। কারণ, সে (রিফাত) ভালোভাবে সাঁতার কাটতে জানত না। কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি। আর এতেই…!’
১২ মে রোববার রিফাতের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। কাঙ্ক্ষিত ফল (জিপিএ-৫) পেয়ে বেশ আনন্দেই ছিল সে। এরই মধ্যে গত সোমবার মা ফাতেমা বেগমের সঙ্গে বড় ভাই লাভলুর বকশীগঞ্জের বাসায় বেড়াতে যায় রিফাত।
লাভলু আরও বলেন, ‘পুলিশের চাকরিতে এসে অনেকের লাশের সুরতহাল করেছি আমি। কিন্তু আমারই কর্মস্থলে আমারই সামনে ছোট ভাইয়ের লাশের সুরতহাল করলেন আমার আরেক সহকর্মী। এই কষ্ট কোনোভাবেই সইবার নয়।’
রিফাতের মতো আর কারও এমন মৃত্যু চান না লাভলু। ভালোভাবে সাঁতার না শিখে পুকুর বা জলাশয়ে না নামার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বুধবার রাত ১১টার দিকে শেরপুর পৌরসভার দীঘারপাড় এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে রিফাতকে দাফন করা হয়।
রিফাতের মৃত্যুর ঘটনায় বকশীগঞ্জ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খান আজ প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।








